Tuesday, April 3, 2018

জিম্নোফোবিয়া ঃ বিগ আপেল, মিষ্ট-দই ও ফাকিং টডলার-পনা



ঘটনা ঘটিবে আগামী পরশু।  অর্থাৎ ১৭ই জুলাই।

নিউইয়র্ক-বাসী স্পেন্সার টিউনিক তাহার  নবতম ইন্সটলেশনটি উপস্থাপন করিবেন। ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকান দের বাৎসরিক কনভেনশনের সামনে একশত নগ্ন নারী বর্তুল একশ'খানি আরশি মেলিয়া তুলিবেন উদগ্র আকাশের দিকে। আর টিউনিক তাহা ফ্রেম-বন্দী করিবেন লেন্স ও কোরিওগ্রাফ শৈলীর অভিনব এক পরীক্ষামূলক ভাষায়। এই উপস্থাপন কে টিউনিক অভিহিত করিতেছেন  "Everything She Says Means Everything." এই অভিধায়। ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান সহযোগীদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে তার এই প্রতিবাদ।


শুনিয়া আমি আমি হাফপ্যান্ট টানিয়া হাডসন ধারে বেঞ্চির পরে আসিয়া লিখিতে থাকি। যে হাফপ্যান্ট পরিয়া এই লেখা লিখিতেছি, তাহার মাপ তেরো ইঞ্চি । অতএব বিগ আপেলের শহরে ইহা কিছুতেই হটপ্যান্ট নহে। তাই গরম চায়ের অর্ডার করিয়াছি।
কিছুদিন পূর্বে, এই হাফপ্যান্ট পরিয়াই ম্যাডিসন স্কোয়ারে যাইয়াছিলাম, নেহাতই কোলকাতার এক বন্ধুর সহিত দেখা করিতে । সেইখানে তখন হেব্বি সংস্কৃতিমূলক হট্টমেলা চলিতেছে। আমি হাফপ্যান্ট পরিয়া প্রবেশ করিলাম। সারে যাঁহা মে তখন কেবলই পাঞ্জাবী ও শাড়ী। সত্য বলিতেছি, মাতা কালিকার দিব্য, নিউইয়র্কে বসিয়া টালিগঞ্জ-কৃষ্টির আতশবাজি দেখিতে যাইব, এমন কুবুদ্ধি আমার কখনো আসে নাই।  তাও আমারে এক বরকর্তা টাইপ আসিয়া জিগাইলে, গা-জোয়ারি পেঁচোমী করিয়া বলিলুম " যাইতে তো এত সাধ, কিন্তু আমিতো শাড়ী পরিয়া আসি নাই, তদুপরি আমার কুকুরটিও সঙ্গে আছে । ভাবিলুম, তিনি বলিবেন 'সো হোয়াট?' । কিন্তু তিনি বলিলেন না । তাহারা কেহই বলিলেননা।

আমি ভাঁড়ে করিয়া  মিষ্ট-দই খাইতে খাইতে ব্রাউন ব্যাগ কে চেনে বাঁধিয়া সাবওয়ে ধরিয়া বাড়ি আসিলাম।

পথিমধ্যে ব্রাউন ব্যাগ হেব্বি ইয়ে জ্বালাইল। আমি জানিতাম,  আমার পশ্চাতে লাগিতে পারে, সেইহেতু, বিষয়ান্তরে যাইতে চাহিলাম। ফল হইলনা। সে আমার হাফপ্যান্ট টানিয়া ফিচলামি করিতে থাকিল।
আমি বলিলাম, দ্যাখ, বিবি, আমরা  উম্যানরা যখন পোশাক খরিদ করি, কি কি ভাবিয়া থাকি বল দেখি ?
ব্রাউন ব্যাগ নঞর্থক কান নাড়াইল।
  • নানা কিছু , ধর কেহ যদি তাহার শরীর কে হাইলাইট করিতে চাহে…
আমার কথা শেষ হয় নাই, বিবি কহিল,
  • আর পুরো শরীর 'প্রদর্শন' করিতে চাহিলে ? মানে যদি কিছুই না পরিয়া তুমি ওই মেসি'র দোকানে প্রবেশ করিতে ইচ্ছা কর...
বিবির চোখ মটকানো প্রমাণ করিতেছে সে আবারো ইয়ে জ্বালাইতে চাহে।
আমি কহি,
  • জেল ও জরিমানা হইবে।
     - আমেরিকায় বলিতেছি, তোমাদের দেশের কথা নহে
     - আমিও আমেরিকার কথাই কহিতেছি, এই দেশে  পারসেপশন ইজ নাইন-টেন্থস অফ
           ট্রুথস। এক উম্যান, শেষ-নাম লাফ্লর, একবার ঠিক করিলেন তিনি নগ্ন হইয়া
          দোকান-বাজার করিবেন। করিলেনও তাই।
                      তো পুলিশ আসিয়া লইয়া যাইল।  মনোরোগের ডাক্তাররা দেখিয়া-টেখিয়া বলিলেন- ইনি সম্পূর্ণ সুস্থ
          এবং নেশা-ভাং ও করেন নাই।
          এমনকি মেডিকেশনেরও কোন ইতিহাস নাই।
  • তাহা হইলে তো খামোখাই নাঙ্গা হাঁটা ?
  • লফ্লরের ব্যাখ্যা ছিল, তিনি নগ্নতার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করিয়া থাকেন । তিনি নগ্ন হইবেন, না পোশাকে ঢাকিবেন, তা' তাহার নিজস্ব ব্যাপার।
          ল্লাফ্লর কে ছাড়িয়া দেওয়া  হইল এই মোতাবেক যে তিনি আবার অভিযুক্ত হইলে
          মানে পোশাক খুলিয়া হাঁটিলে তাহার জরিমানা ও নব্বই দিনের জেল হইবেক।
  • Why?
  • Because public expressions of “explicit” sexuality are generally banned। কোনরূপ যৌনমূলক ইমেজ থাকিলে, তাহা নগ্নতাকে ব্যবহার করিতে চাহে।
          Therefore, if there’s an image of nudity, it must involve sex
    - সেক্সের সহিত নগ্নতার কিরূপ সম্পর্ক রে বাবা ?
    - জিনাইটাল যেহেতু যৌন-অঙ্গ, তাই তাহা দেখাইলে, যৌনতা'র নাম উঠিয়া আসে,
         আর তাহা নগ্নতার সাথে এক করিয়া দেখাইবার চেষ্টা, তাহাতে যৌনতাকেও 'অস্বাভাবিক'
         বুঝাইতে সুবিধা হয়।
    - ইহা হইল ভীতি। নগ্ন দেহের প্রতি ভীতি। ইহারই পোশাকি নাম হইল - জিম্নোফোবিয়া।
    - নাম খাসা, কিন্তু ভীতি কিরূপে ?
    - কিছু কালচারে ভয় আসিয়া থাকে  ধর্মীয় কারণে, সেই সব ধর্মের ব্যাখ্যাকারেরা  শিখাইয়া থাকেন
         যে- মানুষের শরীর  ঘৃণিত বস্তু, তাহাকে আড়াল করিয়া রাখা  উচিত। সেইখান হইতেই
         'অশোভন' ইত্যাদির তকমা  আসিয়া থাকে। ।
                - কিন্তু হলিউডে তো …
     - হলিউডেই …  ফ্রন্টাল ন্যুডিটি  আমেরিকার স্ক্রিনে না-মুমকিন হে
                      আমার ছেলে যখন মিডল-স্কুলে যাইত, একদিন আসিয়া কহিল,' মা ইশকুলে
                      গ্ল্যাডিয়েটর ছবি দেখাইবে, সে ব্যাপারে মত চাহে।  বড় শোরগোল। '
  • কেন শোরগোল কেন ?
     - মানে, ছবিতে অ্যাডাল্ট এলিমেন্ট থাকিতে পারে। তাহা লইয়া  তর্কাতর্কি।
     - তা' শেষে কি ঘটিল ?
     - ছেলে বলিল, ইশকুলের দিদিমণি কহিয়াছে ঃ "Don't worry there is
           no nudity, only  violence."

'নগ্ন শরীর কি ভয়প্রদ ! হত্যাদি, রক্তারক্তি, গুলি-টুলি, ঝাঁজরা শরীর, চাপাতি-টাপাতি এইসকল নেহাতি ইয়ে মানে কুট্টুসের কর্ণ-তলে ক্যাপ্টেনের চেঁচামেচির মতই নির্দোষ, বুঝিলি বিবি,' আমি কহি।
ব্রাউন ব্যাগ ল্যগ-ব্যগ করিয়া কহিল ঃ 'এই  ইউরোপেয়ান সাবেক কলোনির ইমিগ্রান্ট গুলো'র সবার এক টাইপের ক্লিশে, ভূ-লোকে যেন আর কুত্তা নাহি।'

  • এন্ড হাউ মাচ আমেরিকান ইউ আর ? আমি পিতামাতা তুলিতে নারাজ, তুমি যখন এইসব তুলিলে…  তোমার মাতা ছিল বর্ডার পেরুনো বাদামী ইয়ে … আর তোমার পিতা নিখাদ বারমিজ … ভুলিওনা তোমার বাদামী রঙে লাতিনো পলেস্তারা আছে।


  • আসলে, ইহাদের মাথার পিছনে রহিয়াছে  এক অদৃশ্য লোক। সেই লোকের DNA তে রহিয়াছে -  প্যাট্রিয়ারকি, শভিনিজম ও মিসগিনিজমের ভায়াগ্রা। তো সেই লোক কর্ণ-কুহরে দিন নাই, রাত নাই কেবলই বলিয়া যায়  ঃ 'লোকে কি বলিবে?' এই দ্বিতীয় লোক হইল- সর্বব্যাপী ভূলোক, পুরুষ-নারী ব্যাতিরেকে, ভীষণই পুরুষ। কদাপি নারী নহে। বড়জোর মধ্যবিত্ত-লোভী ভদ্রলোক, কিন্তু কদাপি ছোটলোক নহে।
          এই লোক কেবলই ভয় দেখাইয়া চলে । তাহার উত্তরাধিকারে  শুধু যুক্তিহীন ভয় ক্রীড়া করে।

ব্রাউনব্যাগ জিহ্বা ঝুলাইয়া কহে,
  • তোমাদের স্তন আর স্তনের নিপিল লইয়া যে কি গোলমাল, আমাদিগের বড় হাস্য পায়।
          ফেসবুকের জুকেরবারগ  তো কয়টি মানুষের, তোমরা আদিবাসী বলিয়া থাকো যাহাদের,
          তাহাদের শুনিলাম ছবি উড়াইয়া দিয়াছে।
          অথচ আমার সেই কচি ছাগী বন্ধুটিরতো দিব্যি নিপিল দেখাইয়া ছবি পোস্ট করিতেছ ?

(উফ … একবার শুরু হইলে…  )

  • কবে ও কোথায় দেখিলে ? জুকেরবারগ, তো কোনরূপ রেসিজম বরদাস্ত করেননা বলিয়াই বিদিত, তিনি এইরূপ পোস্ট উড়াইবেন কেন ?
  • উফফফ কি ঢপের চপ …
ব্রাউন ব্যাগ খ্যাঁক শব্দে হাস্য করে।   
আমার দিকে ফিরিয়া কায়দাসুলভ বলিয়া ওঠে  ঃ ফাকিং রং… যাহাকে বলে ফাকিং রং

আমি নেট ঘাঁটিয়া দেখিলাম, "Facebook suspends users over traditional Aboriginal ‘nudity’ " এই মর্মে খবর হইয়াছে। বিবি খবর রাখিয়া থাকে অনেক।

প্রথা অনুযায়ী, স্বাভাবিক ভাবেই অস্ট্রেলিয়া'র সেই জনগোষ্ঠী তাহাদের উন্মুক্ত স্তনকে রঙ্গিন করিয়া আসরে আসিয়াছিলেন, সেই ছবি একটি অনলাইন ম্যাগে প্রকাশিত হয়, লেখক Celeste Liddle, এর একটি আর্টিকল এর সহযোগী হিসাবে  (“the intersection between feminism and indigenous rights” )
'এই হল আমেরিকা। ' Liddle লিখিয়াছেন ঃ

"Violence is fine, gun fetishes abound, Politicians fake religious fervor for votes, but a boob is the a demon from the 2nd Circle of hell. Although the country’s culture minister Ali Jannati said he hoped the displays would be part of Iran’s increasing openness, some works remain hidden away — still considered too strongly associated with the U.S. or too sexually alluring. This includes Pierre-Auguste Renoir’s masterful “Gabrielle With An Open Blouse,”

ওই যে, বলিতেছিলাম, এই দেশে - পারসেপশন ইজ নাইন-টেন্থস অফ ট্রুথস।



*******


আজ ১৯ শে জুলাই। সে ঘটনা ঘটিয়া গিয়াছে।
একশত নারী  বর্তুল একশ'খানি আরশি মেলিয়া তুলিয়াছেন উদগ্র আকাশের দিকে, সমস্ত শরীর উদ্বাহু, কেহ স্তন-ভারা, কেহ পালক-সম, কেহ কারভি, কাহারো কুঞ্চিত ত্বক, কাহার বাদামী, কাহার ঘন কৃষ্ণ, কেহ কেশবিহীন-মুণ্ডিত মস্তক।
টিউনিক তাহাদের ফ্রেম বন্দী করিতেছেন।  সে ফ্রেম দিগন্ত বিস্তৃত।


আমি ঘুমের ভিতর দেখিতে পাই ঃ
হঠাৎ একশটি আরশির রং লাল হইল যেন।  আমি দেখিলাম, সব কটি শার্শি জুড়িয়া কোন এক নারীর স্কারট উড়িতেছে।  পাশ হইতে কৃত্রিম বাতাস দেওয়া হইতেছে। স্কারট ফুলিয়া-ফাঁপিয়া, নারী যখন লাস্যে ভাসিয়া  তাহার দেহ উন্মোচন করিয়া, হাসি উড়াইয়া, এক পৃথিবী গান গাহিবেন ঠিক করিয়াছেন, ঠিক তখনই তিনি তাহার ফ্রক 'সঠিক' সময়ে খামচাইয়া ধরিয়া দ্রুত সেক্স ও ন্যুড আইকন হইতে  জিম্নোফোবিয়ার শ্যুভেনির হইয়া যাইতেছেন। এই পঞ্চাশ তারার দেশে, সর্বাধিক বিক্রিত তিনিই একাধারে প্রি ও পোস্ট মডার্ন শ্যুভেনির।

টিউনিক এযাবৎ পাঁচটিবার অ্যারেস্টেড  হইয়াছেন। ক্লিভল্যান্ডের পর তাহার গ্রেপ্তার হইবার কোন খবর  এখনো আসে নাই। বাছা যেমন জুজু বলিলেই ভয় পাইতে থাকে, যে জুজু সে চিনেনা, জানিতে পারেনা, শুধু ভয় পাইয়া থাকে। শরীর লইয়াও  'তাহাদিগের' মাথায় এইরূপ ব্রেনফারটিং হইতে থাকে। এই 'তাহারা' কাহারা, কেন তাহাদের এইরূপ টডলার-পনা ... তাহার ইতিহাস ও ইত্যাদি, এইসব ভাবিতে ভাবিতে  আমি ব্রাউন ব্যাগের পাছায় খরাস করিয়া অল্প আঁচড়াইয়া দিইয়াছি।
তাহাতে ব্রাউন ব্যাগ জিহ্বা খিঁচাইয়া কহিতেছে ঃ কি হইল ?
আমি বলিলাম ঃ আমার একটি প্রশ্ন করিবার আছে।
এরপর সম্মতির প্রতীক্ষা না করিয়াই জিগাইলাম ঃ আচ্ছা, ইয়ে, মানে, তোমরা, কুকুরেরা তোমাদিগের অণ্ডকোষ কেন …
বলা শেষ হয় নাই।  ব্রাউন ব্যাগ থাবা দিয়া থামাইয়া দিয়াছে। শরীর-সম্পর্কীয় কথা সে ইংরেজিতে কহিতেই পছন্দ করিয়া থাকে। ।

আমি ফের  শুরু করিলাম। এইবার ইংরাজিতে-
  • ''হোয়াট ডু ইয়ু  থিংক, Why do dogs lick their balls?''

ব্রাউন ব্যাগ আমার দিকে একটুও না তাকাইয়া কহিল ঃ

  • "Because they can.”


gettyimages-576704294.jpg

জিম্নোফোবিয়া ঃ বিগ আপেল, মিষ্ট-দই ও ফাকিং টডলার-পনা ঘটনা ঘটিবে আগামী পরশু।  অর্থাৎ ১৭ই জুলাই। নিউইয়র্ক-বাসী স্পেন্সার টিউনিক তাহার...